
📰 বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের সোনাউঠা গ্রামে দুই দফা ধর্ষণের শিকার হয়েও উল্টো গ্রামছাড়া হয়েছেন এক হিন্দু গৃহবধূ (৩৮)। বখাটেদের পরিবার ও স্বজনদের লাগাতার হুমকি-ধামকির মুখে মামলা করেও নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে ওই কৃষক পরিবারটি। আসামিদের মধ্যে একজন জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের।
💔 দুই দফায় বর্বরতা, মোবাইল ফোনে ধারণ
ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাউঠা গ্রামের বাসিন্দা ওই কৃষক (৩৮) দম্পতির দুটি শিশু-কিশোর বয়সী ছেলে রয়েছে। অভিযুক্ত যুবকেরা হলো—একই গ্রামের নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম হাওলাদার (২৫) এবং শহিদ হাওলাদারের ছেলে মো. ইমরান হাওলাদার (৩০) ও তার ছোট ভাই ইমরাজ হাওলাদার (২২)। তারা এলাকায় বখাটে ও খারাপ প্রকৃতির বলে পরিচিত।
প্রথম ঘটনা: গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে গৃহবধূর স্বামী ও ছেলেরা বাজারে গেলে বাড়িতে তাঁকে একা পেয়ে সাইফুল ও ইমরান জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। লোকলজ্জা ও ভয়ে সে সময় ঘটনাটি কাউকে জানাননি ভুক্তভোগী।
দ্বিতীয় ঘটনা: প্রথম ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২৯ অক্টোবর দুপুরে স্বামী ও ছেলেরা ক্ষেতের কাজে গেলে ফের সুযোগ নেয় অভিযুক্তরা। এবার সাইফুল ও ইমরান পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে ইমরানের ছোট ভাই ইমরাজ হাওলাদার (২২)। যাওয়ার সময় তারা ঘটনা প্রকাশ করলে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া ও হত্যার হুমকি দেয়।
🚨 মামলা দায়ের, হুমকি ও জামিনে মুক্তি
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ১ নভেম্বর আমতলী থানায় সাইফুল, ইমরান ও ইমরাজের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নগ্রাফী আইনে মামলা দায়ের করেন।
* মামলার পরপরই পুলিশ ২ নম্বর আসামি ইমরান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।
* ৩ নম্বর আসামি ও ভিডিও ধারণকারী ইমরাজ হাওলাদারকে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
* কিন্তু, গ্রেপ্তার হওয়া ২ নম্বর আসামি ইমরান হাওলাদার বুধবার আমতলীর আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
জামিন পাওয়ার পর ইমরান এলাকায় ফিরে এসে তার মা বিউটি বেগম, সাইফুলের মা পিয়ারা বেগম ও বউ হামিদা বেগম-এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকের স্ত্রী।
🏠 আতঙ্কে পরিবার, গ্রাম ছেড়েছেন গৃহবধূ
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, “ওরা খুব খারাপ লোক। আমি মামলার পর থেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ওরা আমার স্বামী-সন্তানকেও ভয় দেখাচ্ছে।”
ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, “দুই ছেলে নিয়ে এখন বাড়িতে থাকতেও ডর লাগে। ওরা কইছে, তোরা নমোরা (হিন্দু) দ্যাশে থাকতে পারবি না।” আসামিপক্ষের স্বজনেরা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাপ দিচ্ছে বলেও তিনি জানান। ১৬ বছর বয়সী ছেলেটিও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করে।
এই প্রতিবেদন তৈরির সময় অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে তারা বাড়িতে থাকেন না।
👮♂️ পুলিশের বক্তব্য
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ইমরান ও ইমরাজকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল। প্রধান আসামি সাইফুলকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে বুধবার ইমরান জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আসামিপক্ষের স্বজনেরা ওই পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে বলে তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।