
সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ
বরগুনার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ তত্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবুলসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও জোরপূর্বক প্রাইভেট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবুল দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে আদায় করেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়া হয় এবং ফেল দেখানো হয় বলেও শিক্ষার্থীদের দাবি।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই শিক্ষক। বর্তমানে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অন্য কয়েকজন শিক্ষকের সাথে মিলে রমরমা প্রাইভেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। ফলে গরীব, অসহায় ও দিনমজুর পরিবারের অভিভাবকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন—
“বাবুল স্যার ক্ষমতার দাপটে পুরো বিদ্যালয় জিম্মি করে রেখেছেন। পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। ছাত্ররা তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে ফেল দেখানো হয়। বাধ্য হয়েই আমাদের সন্তানদের টাকা দিয়ে পড়াতে হয়।”
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয় প্রায়ই দুপুর ৩টার আগেই ছুটি দিয়ে দেয়, যা সরকারের নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকার শিক্ষার্থীদের উন্নত প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করতে যে ল্যাপটপ সরবরাহ করেছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। বরং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুলে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়ও টাকা আদায় করা হয়।
সাংবাদিক পরিচয়ে গেলে অসৌজন্য আচরণ
এ বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ে গেলে সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবুল উত্তেজিত হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন—
“আমতলীর সব স্কুলেই প্রাইভেট পড়ানো হয়। তাহলে আমাদের স্কুলে পড়ানো হলে সমস্যা কোথায়?
প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের বক্তব্য
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বি এম এ ছোবাহান বলেন—
“আমার চাকরি বেশিদিন নাই, তাই সাক্ষাৎকার দেবো না।”
তার এ বক্তব্য সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানোর ইঙ্গিত দেয় বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদ আলম জানান—
“বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা প্রত্যাশা-
বিদ্যালয়ে এমন অনিয়ম অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অভিভাবকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা দাবি করেছেন।