
প্রশাসনিক সংকটে পাঠদান ব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার || দৈনিক শেষকথা
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাথরঘাটা কেএম মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক সংকটে ভুগছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় পাঠদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেমে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক স্বীকৃতি এবং ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়। ২০২২ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক এবং ২০২৩ সাল থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কেউ নেই। পাশাপাশি ইংরেজি, ব্যবসায় শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক সংকট আরও প্রকট করেছে একাডেমিক দুরবস্থা।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান—
“নেতৃত্বহীন অবস্থায় পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, নথি-পরিচালনা, শৃঙ্খলা রক্ষা—কোনো কিছুই সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। চেষ্টা করেও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বে থাকা মো. শহীদুল ইসলামকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। তার বিরুদ্ধে সনদ পুনর্লিখন (ওভার রাইটিং), নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন খানকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছে তদন্তাধীন। যদিও শহীদুল ইসলাম দাবি করেন—
“সাবেক প্রধান শিক্ষকের সাথে বিষয়টি সমঝোতায় হয়েছে।”
শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের ক্ষোভ
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানান,
“ক্লাসে শৃঙ্খলা নেই। মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
অভিভাবকরা বলছেন—
“এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। শৃঙ্খলা নেই, উপস্থিতি কমছে—এভাবে আর চলতে পারে না।”
ঐতিহ্যের অবক্ষয় নিয়ে আক্ষেপ
শিক্ষানুরাগী চৌধুরী মোহাম্মদ মাসুম বলেন—
“এই প্রতিষ্ঠান একসময় এ অঞ্চলের শিক্ষার গর্ব ছিল। এখন সেই গৌরব ম্লান। অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঐতিহ্য শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন—
“যোগ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক দ্রুত নিয়োগ না দিলে পুরো অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিক্ষা প্রশাসনের আশ্বাস
বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান—
“শূন্যপদের তথ্য ডিএসই-তে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দেরি হচ্ছে। খুব দ্রুতই নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”
উপসংহার
দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক সংকটের কারণে পাথরঘাটা কেএম মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অধঃপতনের ঝুঁকিতে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও কার্যকর নজরদারি না হলে বরগুনার অন্যতম পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা অভিভাবক-সচেতনমহলের।