
বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে নিজ কার্যালয়ে অবৈধ বসবাস, নিয়োগ বাণিজ্য, একাধিক বিবাহ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
🏛️ অফিসে অবৈধভাবে বসবাস ও সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ
জানা যায়, বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অফিসে বেআইনিভাবে পরিবার নিয়ে বসবাসের অভিযোগ ছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ অক্টোবর কয়েকজন সাংবাদিক তাঁর অফিসে যান। সাংবাদিকেরা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, শিক্ষা অফিসের তৃতীয় তলায় দুটি কক্ষ ব্যবহার করে তিনি সপরিবারে বসবাস করছেন। পাশের অন্য দুটি কক্ষ স্টাফদের কাছে ভাড়া দেয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়।
সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন তাঁর পরিবার নিয়ে অফিসে থাকার কথা স্বীকার করেন এবং সাংবাদিকদের নিজ বাসকক্ষে নিয়ে দেখান। অভিযোগ উঠেছে, এক পর্যায়ে তিনি নিজেই দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
📰 সংবাদ প্রকাশের পর চাঁদাবাজির মামলা
সাংবাদিকেরা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন পত্রিকায় জেলা শিক্ষা অফিসারের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। এর তিন দিন পর, গত ৩০ অক্টোবর, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন মামলা দায়েরের ঘটনায় জেলার সাংবাদিক সমাজ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
💥 শিক্ষক জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যোগদানের পর থেকেই নানান ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি গত ১১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:
* নিয়োগ বাণিজ্য: যোগদানের পর থেকেই তিনি বরগুনায় বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
* অফিস সহকারীকে মারধর: শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী গোলাম কবিরকে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহের কথা প্রথম স্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগে গত ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখ তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
* অফিসে অবৈধ বসবাস: অফিসের কক্ষকে ব্যক্তিগত বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার।
💔 বিবাহ বিচ্ছেদ ও কাবিন নিয়ে জটিলতা
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দীনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও গুরুতর তথ্য সামনে এসেছে।
* প্রথম বিবাহ গোপন করে দ্বিতীয় বিবাহ: তিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী-সন্তানের কথা গোপন রেখে গত ২৫ জুন ২০২২ তারিখে বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাভলী আক্তার নিপাকে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিবাহ করেন।
* বিচ্ছেদ ও পুনরায় বিবাহ: পরবর্তীতে সম্পর্কের অবনতি হলে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর জসিম উদ্দিন ভুল স্বীকার করে পুনরায় নিপাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন এবং গত ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ৯১ লক্ষ টাকা কাবিনে দ্বিতীয়বারের মতো নিপাকে বিবাহ করেন।
* দ্বিতীয় বিচ্ছেদ ও মামলা: বিপুল অঙ্কের কাবিনের পরেও সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে গত ১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে কাবিনের টাকা পরিশোধ না করেই তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরে জসিম উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী মমতাজ বেগম, জসিম উদ্দিন এবং তাঁর ড্রাইভার নাসির উদ্দীন নিপার বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও মারধর করেন। এই ঘটনায় নিপা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে গত ০৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
🗣️ স্থানীয়দের দাবি-
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি করেছেন বরগুনার সচেতন মহল ও সাংবাদিকেরা।