
📰 স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক শেষ কথা | বরগুনা, ৪ নভেম্বর ২০২৫
অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুর কারণে বরগুনার খাকদোন নদীতে নৌযান চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। পায়রা ও বিষখালী নদীকে সংযুক্ত করা ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীতে নির্মিত ২২টি সেতু এখন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও নৌচলাচলের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কম উচ্চতা ও ঘন ঘন পিলার নির্মাণের কারণে জোয়ারের সময় বড় নৌযান সেতুর নিচ দিয়ে যেতে পারে না, আবার ভাটার সময় নাব্যতা সংকটে ট্রলার ও অন্যান্য নৌযান বালুতে আটকে পড়ে। ফলে বরগুনার অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাতায়াত কার্যত অচল হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এসব সেতুর কারণে মাছ ধরার ট্রলারসহ বড় নৌযানগুলো নদীপথে আসতে পারে না। এতে নদীপথে বাণিজ্য ও মৎস্য আহরণে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
এক ট্রলারচালক বলেন, “জোয়ারের সময় ব্রিজের নিচ দিয়ে নামতে গেলেই ট্রলার আটকে যায়, আবার ভাটায় বালুর স্তূপে আটকে পড়ে যেতে হয়।”
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পরিকল্পনাহীনভাবে অতিরিক্ত সেতু নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স না নেওয়ায় নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, পলি জমে নদীটি ধীরে ধীরে খালে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেট মেম্বার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “অপরিকল্পিত অনেকগুলো ব্রিজ নির্মাণের কারণে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে। পলি জমে নদী ভরাট হচ্ছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে এই নদী হারিয়ে যাবে।”
নিয়ম অনুযায়ী নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের স্তর থেকে অন্তত ১৮ ফুট উচ্চতায় সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও খাকদোন নদীর বেশিরভাগ সেতুতেই তা মানা হয়নি। এমনকি বিআইডব্লিউটিএ’র নেভিগেশন ছাড়পত্রও অনেক ক্ষেত্রে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান। তিনি বলেন, “২০১০ সালের আগে যেসব ব্রিজ নির্মিত হয়েছে, তখন নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। ২০১০ সালের পর নির্মিত ব্রিজগুলোর ক্ষেত্রে আমরা ক্লিয়ারেন্স নিয়েই কাজ করেছি। ভবিষ্যতে নদী খনন হলে প্রয়োজনে এসব সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে পায়রা-বিষখালী সংযোগকারী এই খাকদোন নদী একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তারা দ্রুত নদী খনন ও সেতুগুলোর উচ্চতা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।